সিলেটে প্রতিনিধি : যে মাছ দেখলেই লোভ লাগে। জিভে জল এসে যায়। খেতে ইচ্ছে করে। তাই হয়তো সুদৃশ্য, দৃষ্টিনন্দন এ মাছের নাম রাখা হয়েছিল রানি মাছ। আগে মাছের বাজারে গেলেই দেখা মিলত রানি মাছের। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হঠাৎ দেখা মিললেও তা যৎসামান্য।
বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলাসহ সিলেটের বিভাগের জলাশয় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু এ ‘রানি মাছ’। দৃষ্টিনন্দন এ মাছ এক সময় সারা বছরই সিলেটের নদী, খাল-বিল ও হাওরবাওরে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন নেই বললেই চলে। সিলেটের মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত জলাশয়গুলোতে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণের ফলে এ মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
রানি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বটির ডারিও।. সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে এ মাছকে বেতি মাছ, বৌ মাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গি মাছ, বেতরঙ্গি মাছ, বুকতিয়া মাছ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। হলুদের মধ্যে কালো ডোরা কাটা এ মাছ ৪ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে, পরিবেশের ভিন্নতার কারণে মাছের আকার, রং ও স্বাদের পরিবর্তন হয়ে থাকে। ‘রানি মাছ’ সাধারণত কর্দমাক্ত পানিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
সিলেটের নদ-নদী হাওরে আগে এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। নদী কিংবা বিলে বাঁশের চোঙা ফেলে রাখা হত। পরদিন এ চোঙা তুলে রানি মাছ পাওয়া যেত। জেলেদের জালেও এ মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন জালেও এ মাছ ধরা পড়ে না। সেচ করেও খুব একটা পাওয়া যায় না।
উপজেলার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র গোয়ালা বাজারের একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, রানি মাছের কদর খুব বেশি। কিন্তু মাছটি এখন পাওয়াই যায় না। আগে মাছের ফাঁদে অন্য জাতের সঙ্গে রানি মাছও পাওয়া যেত। মানুষজন শখ করে এ মাছ কিনত। কিন্তু এখন শখ আছে মাছটি নেই। লোকজন খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু আমরা মাছটি দিতে পারি না। পানিতে থাকলে তো এ মাছ ধরা পড়ত। পানি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ মাছ।
শেরপুরের মৎস্য আড়ৎদার বলেন, এক সময় সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে সারা বছরই ‘রানি মাছ’ ধরা পড়ত। তবে, বর্ষা মৌসুমে বেশি পরিমাণে এ মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা বিভিন্ন জাতের জাল ও চাঁই দিয়ে এ মাছ ধরতেন। নদীতে এখন আগের মতো রানি মাছ পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে এ মাছের দেখাই মেলে না। বর্ষাকালে মাঝে মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে এ মাছ ধরা পড়ে।
মাছ ক্রেতা শুভ দেব নয়ন বলেন, ছোটবেলায় অনেক রানি মাছ খেয়েছি। এখন বর্ষাকাল ছাড়া এ মাছ মেলে না। বাজারে সুস্বাদু এ মাছের সরবরাহ কম থাকায় দামও বেশি। প্রতি কেজি রানি মাছ কিনতে হলে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় প্রয়োজন। তাই এখন আর রানি মাছ খাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
বালাগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বনিক বলেন অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণের ফলে সিলেটের জলাশয়গুলো থেকে ‘রানি মাছ’ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো সিলেট বিভাগে বিভিন্ন হাওর ও নদ-নদীগুলো এ মাছ কিছু কিছু পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।